উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩/০৩/২০২৫ ১০:৪২ এএম , আপডেট: ১৩/০৩/২০২৫ ১০:৪৭ এএম

এক যুগ আগে টেকনাফে চায়ের দোকান চালাতেন পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আলিচান মাতব্বর পাড়ার মধ্যবয়সী নুরুল হুদা। সেখানেই রোহিঙ্গা নারী আরেফা বেগম তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন। চার সন্তানের জননী হলেও দেখতে সুন্দর আরেফাকে বিয়ে করে নুরুল হুদা চট্টগ্রামের পটিয়ায় চলে আসেন। সেখানে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে তারা বসবাস করেন। আরেফা অনেক চেষ্টা করেও বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে না পারায় তারা কাবিননামা ও রেজিস্ট্রেশন করতে পারেননি। তবে আরেফা নিজে ব্যর্থ হলেও নুরুল হুদাকে তার আগের ঘরের ছেলে আয়াত উল্লাহর বাবা দেখিয়ে পটিয়া থেকে নিয়েছেন জন্মনিবন্ধন। জন্মনিবন্ধনে নুরুল হুদা ও আয়াত উল্লাহর স্থায়ী ঠিকানা দেখানো হয়েছে পটিয়ার কচুয়াই চক্রশালা পারিগ্রাম এলাকার মমতাজ মিয়ার বাড়ি। যার হোল্ডিং নম্বর ৭৫৩৯। ২০২৪ সালের ২০ মার্চ নেওয়া সেই জন্মনিবন্ধন দেখিয়ে এবার পেকুয়া থেকে হয়েছেন ভোটার। খবরের কাগজের অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। উখিয়া নিউজ ডটকম।

দুই সনদে স্থায়ী ঠিকানা দুটি

গত ৩১ জানুয়ারি শিলখালী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আয়াত উল্লাহ যে জাতীয়তা সনদপত্র নিয়েছেন তাতে স্থায়ী ঠিকানা দেখানো হয়েছে আলিচান মাতব্বর পাড়া। অর্থাৎ নুরুল হুদার স্থায়ী ঠিকানাকেই আয়াত উল্লাহ তার স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তাতে স্বাক্ষর করেছেন প্রশাসক নুর পেয়ারা বেগম এবং ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আসাদুল আলিম। তবে তার জন্মসনদে স্থায়ী ঠিকানা দেখিয়েছেন পটিয়া।

সুপারিশ করেছেন ইউপি মেম্বার

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবুল কালাম ও নুরুল হুদার বাড়ি কাছাকাছি। নুরুল হুদার পরিবার সম্পর্কে আবুল কালাম সবকিছু জানেন। তা ছাড়া নুরুল হুদার প্রথম স্ত্রী মমতাজ বেগম ও তার ছেলেরা আয়াত উল্লাহর বিষয়ে আবুল কালামকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। সব জেনেশুনে আয়াত উল্লাহকে ভোটার করার সুপারিশ করেছেন মেম্বার কালাম ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা।

Ezoic
এ ব্যাপারে জানতে ফোন করা হলেও রিসিভ না করায় ইউপি সদস্য আবুল কালাম ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চকরিয়া-কক্সবাজারের মধ্যবয়সী ও বয়স্কদের বিয়ে করে বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার চেষ্টা করছেন অনেক রোহিঙ্গা নারী। এর মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার কেউ নেই তারা সফলও হচ্ছেন। অনেকেই ব্যর্থ হলেও তারা বর্তমান স্বামীকে বাবা দেখিয়ে আগের সংসারের সন্তানদের নাগরিক করে নিচ্ছেন। তাদের এ কাজে সহযোগিতা করছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, সচিব এবং এলাকার দালালরা।

Ezoic
জানতে চাইলে পেকুয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম খবরের কাগজকে বলেন, সন্দেহ হওয়ার কারণে এ ধরনের অন্তত তিনটি ফরম তারা আটকে রেখেছেন। তবে রোহিঙ্গা আয়াত উল্লাহ ভোটার হয়ে গেছেন। তার বিরুদ্ধে আগে থেকে কেউ সোচ্চার হলে তিনি ভোটার হতে পারতেন না।

মুঠোফোনে খবরের কাগজের কাছে নুরুল হুদা স্বীকার করেন, আয়াত উল্লাহ তার দ্বিতীয় স্ত্রী আরেফা বেগমের আগের সংসারের সন্তান। আরেফার সঙ্গে তার এখন তেমন সম্পর্ক নেই। তবে আয়াত উল্লাহ তার সঙ্গে আছেন বলে উল্লেখ করেন।

Ezoic
জানতে চাইলে শিলখালী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ খবরের কাগজকে বলেন, সচিবের স্বাক্ষর আছে। তিনি সই করেননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, স্থানীয় মানুষের ভোটার হতে কষ্ট হচ্ছে। অথচ রোহিঙ্গারা ভোটার হয়ে যাচ্ছে। এটা দুঃখজনক। আরেফা বেগম রোহিঙ্গা হয়েও পাঁচ বছর আগে ভোটার হওয়ার চেষ্টা করেছেন উল্লেখ করে প্যানেল চেয়ারম্যান জানান, তিনি তা হতে দেননি। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে তিনি আয়াত উল্লাহ ভোটার বাতিল করার অনুরোধ করেন বলেও উল্লেখ করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শিলখালীর ৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার ঘটক আবুল হোসেন আয়াত উল্লাহকে এ কাজে সহযোগিতা করেছেন। শিলখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহাদাত হোসেন এলাকার বিভিন্নজনের সহযোগিতা নিয়ে স্কুলে বসেই ভোটার হালনাগাদকরণের বেশির ভাগ কাজ সেরেছেন। দালালের মাধ্যমে যার সুযোগ নিয়েছেন রোহিঙ্গা যুবক।

নুরুল হুদার প্রথম ঘরের ছেলে মো. রুবেল খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা এলাকার মেম্বার ও মহিলা মেম্বার এবং শাহাদাত স্যারকে গিয়ে বলেছি আয়াত উল্লাহর জন্মস্থান মায়ানমারে। তিনি একজন রোহিঙ্গা। কেউই তার কথায় কর্ণপাত করেননি।’ তার ধারণা, এখানে অর্থের লেনদেন হয়েছে। নতুবা কেউই তার অভিযোগের গুরুত্ব দিলেন না কেন?

Ezoic
নুরুল হুদার স্ত্রী মমতাজ বেগমেরও একই অভিযোগ। সংশ্লিষ্টরা অর্থের বিনিময়ে আয়াতকে ভোটার করেছেন।

ওই ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য হোসনে আরা বেগম বলেন, শিলখালীতে অনেক ভোটার। এত লোকের মাঝে তিনি খেয়াল করতে পারেননি। তা ছাড়া আয়াতের কাছে সব ডকুমেন্টস ছিল। তাই তিনি স্বাক্ষর করেছেন।

গ্রাম চৌকিদার ইসমাইলের বক্তব্য হলো ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার ও সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার স্বাক্ষর করেছেন, তাই তিনিও করেছেন।

জানতেন ভোটার হালনাগাদকরণ কর্মকর্তাও

শিলখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহাদাত হোসেন বলেন, অভিযোগ পেয়ে তিনি কাগজগুলো মেম্বার ও মহিলা মেম্বারকে দিয়ে দিয়েছিলেন। তা ছাড়া আয়াত উল্লাহকে ভোটার করার জন্য আরেফা বেগমের যে আইডি কার্ড দেওয়া হয়েছে সেটিও জাল। এখন কথা হলো ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বরত যে ব্যক্তি আছেন, তিনি মায়ের আইডি কার্ড যাচাই না করে কীভাবে রোহিঙ্গা নয় এমন ফরম ও অন্যান্য কাগজ দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনার আরেফা বেগমের আইডি কার্ড যাচাই না করে কীভাবে অনুমোদন দিলেন? পাল্টা প্রশ্ন করেন শাহাদাত হোসেন।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম খবরের কাগজকে বলেন, ভোটার হালনাগাদ বিশাল একটি কর্মযজ্ঞ। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা যাচাই-বাছাই করে যেসব সনদ দিয়েছেন তার ভিত্তিতেই তারা ভোটার করেছেন। সনদ অনুযায়ী আয়াতের বাবা বাংলাদেশি। মায়ের আইডি কার্ড নেই। আমাদের লক্ষ্য হলো কোনো বাংলাদেশি যেন বাদ না পড়েন। কোনো বিদেশি যেন ভোটার না হয়। আগামী জানুয়ারিতে ভোটার তালিকা খসড়া প্রকাশ হবে। তখন কেউ অভিযোগ দিলে তার নাম বাতিল করা হবে। যেসব রোহিঙ্গা ভোটার হয়ে গেছে, তাদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ না দিলে তারা কি ভোটার থেকে যাবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা নিজেরাও যাচাই-বাছাই করব।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’ আয়াত উল্লাহর ঘটনার বিষয়ে তিনি খোঁজ নেবেন বলে জানান।
সুত্র,খবরের কাগজ

পাঠকের মতামত

বাংলাদেশকে ‘মানবিক করিডর’ দেওয়ার আহ্বান ফোর্টিফাই রাইটসের

মিয়ানমারের রাখাইনে যুদ্ধাক্রান্ত বেসামরিক নাগরিকদের জন্য মানবিক সহায়তা এবং আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য নিশ্চিত করতে এখনই করিডোর ...

ফ্যাসিবাদী নয়, মানবিক বাংলাদেশ চাই: মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী খাগড়াছড়ি জেলার উদ্যোগে বিশিষ্টজনদের সম্মানে ইফতার ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে ...

নারীর সঙ্গে ইয়াবা খাচ্ছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা

পিরোজপুরে নারীসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বাবুল সরকারের ইয়াবা সেবনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল ...